কোরবানির পরবর্তী সময়ে করণীয়
পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় এবং পশু কোরবানি দিয়ে আমরা বিদায় জানাই এই মহত্বপূর্ণ দিনে। নবীপ্রেমিকরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু ক্রয় করে কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বড় পশু ক্রয় করলেও আমরা কি সত্যিই নিজের অন্তরের পশুত্ববোধ কোরবানির মাধ্যমে মেরে ফেলতে পেরেছি?

কোরবানির আগে আমাদের মনে থাকা অহংকার, হিংসা, দেমাক ইত্যাদি গুণাবলী কি কোরবানির পরও রয়ে গেছে? আগে যেমন ছিলাম, এখনো কি একই রকম? নিজের অন্তরকে সাদামাটা করতে পারিনি? আসল উদ্দেশ্য হলো কোরবানি দিয়ে নিজের মধ্যে থাকা পশুত্ব, অহংকার, হিংসা, মিথ্যা, গিবত, চোখলোখুরি, অন্যায় আচরণ এসব কোরবানি করা।
মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “আল্লাহপাকের কাছে গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না বরং তোমাদের আন্তরিকতা, শ্রদ্ধা ও তাকওয়াই পৌঁছায়।” (সুরা হজ্জ-৩৭)
অর্থাৎ, কোরবানির পশু বড় বা দামি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কোরবানি দেয়ার পেছনের ইচ্ছা ও তাকওয়া বড় কথা। কোরবানি হোক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, লোক দেখানোর জন্য নয়। এছাড়া কোরবানি অবশ্যই হালাল উপার্জনের অর্থ থেকে করা উচিত।
বিশ্লেষণ: অন্তর পরিবর্তনের গুরুত্ব
কোরবানির আসল অর্থ হলো শুধু পশু জবাই নয়, বরং আত্মার পরিচ্ছন্নতা ও মনুষ্যত্বের পুনরুজ্জীবন। যে ব্যক্তি কোরবানি করে কিন্তু তার অন্তর একই অবস্থা থাকে — অহংকার, হিংসা, মিথ্যা ইত্যাদি — সে আসলে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেনি। প্রকৃত তাকওয়া অর্জন না করলে কোরবানির ইবাদত আড়ালে থেকে যায়।
ইসলামিক তত্ত্ব মতে, মানুষের মনোভাবই তার ইবাদতের মূলে অবস্থান করে। সুতরাং কোরবানির মাধ্যমে পশুত্ব বা অবৈধ মানসিকতাকে ধ্বংস করে, অন্তরের পরিবর্তন সাধন করাই প্রকৃত কোরবানির উদ্দেশ্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কোরবানি একটি আত্ম-শুদ্ধির মাধ্যম।
বিশ্লেষণ: নামাজ ও কোরবানির সম্পর্ক
নামাজ ইসলামের অন্যতম ভিত্তি এবং কোরবানির আগে ও পরে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। লেখক যেভাবে উল্লেখ করেছেন, নামাজ এবং কোরবানি যেন একে অপরের পরিপূরক। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানির পর নামাজের গুরুত্ব কমে না, বরং বাড়ে।
যারা কোরবানি করতে সক্ষম হলেও নিয়মিত নামাজ থেকে দূরে থাকেন, তাদের কোরবানির কার্যকারিতা অনেকাংশে সীমিত হয়ে যায়। নামাজের মাধ্যমে মনস্থিরতা, তাকওয়া ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মানসিকতা আরও গভীর হয়, যা কোরবানির উদ্দেশ্য পূরণে সাহায্য করে। তাই নামাজ এবং কোরবানি একত্রে বাস্তবিক ‘তাকওয়া’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্লেষণ: সামর্থ্য ও ইবাদতের সমতা
লেখক যে সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও দোয়া ও শুকরিয়া নামাজের গুরুত্ব দিয়েছেন, তা খুবই প্রাসঙ্গিক। ইসলাম যে প্রত্যেক ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত গ্রহণ করেন, তা স্পষ্ট। সামর্থ্য না থাকলে কোরবানি দেয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের জন্য অন্যান্য ইবাদত যেমন নামাজ, দোয়া ও শুকরিয়া আদায় করতে হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায়, ইবাদতের উদ্দেশ্য শুধু বাহ্যিক কাজ নয়, বরং অন্তরের পরিবর্তন ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। সামর্থ্যের অভাব সত্ত্বেও আন্তরিক দোয়া ও নামাজের মাধ্যমে কেউ আল্লাহর কাছে নিজের অবস্থান সুনিশ্চিত করতে পারে।
সর্বোপরি, কোরবানির পরবর্তী সময়ে করণীয় হলো— অন্তরের পশুত্ব দূর করা, তাকওয়া বৃদ্ধি করা, নিয়মিত নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব ইবাদত পালন করা। কোরবানির প্রকৃত ফজিলত তখনই অর্জিত হবে যখন এগুলো মিলেমিশে একজন মুসলমানের জীবন হয়ে উঠবে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ।
0 comments:
Post a Comment