💃 হৃদিশেখ: নাচ, যার জীবনের ভাষা
আজ আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। এ দিনে কথা বলেছি এমন একজন নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে, যার জীবনে নাচ শুধু পেশা নয়, বরং নিজেকে প্রকাশ করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম—হৃদিশেখ। তিনি একাধারে নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার এবং ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
✨ শুরুটা কোথা থেকে?
হৃদিশেখের জন্ম রাশিয়ার মস্কোয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই নাচ শুরু করেন। ২০১৬ সালে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো 'সেরা নাচিয়ে'-তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঢাকায় তার যাতায়াত বাড়ে। ২০২০ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন এবং পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেন।
তিনি বলেন,
“নাচের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি, আবেগ প্রকাশ করতে পারি। নারীদের অনুপ্রাণিত করছি, সংস্কৃতিকে তুলে ধরছি—এই কাজগুলো আমায় তৃপ্তি দেয়।”
🔄 ফিউশনের ভিন্নধর্মী পরিচিতি
হৃদিশেখের নাচে রয়েছে ফিউশন স্টাইলের একটি শক্তিশালী স্বাক্ষর। শৈশবে শিখেছেন কত্থক, আর কিশোর বয়সে হাতেখড়ি হয়েছে হিপ-হপ, ওয়েস্টার্ন এবং আরবান ডান্সে। জনপ্রিয় গান ‘বেণি খুলে’, ‘ঝুমকা’, ‘চেনা চেনা’-তে কোরিওগ্রাফি করে পেয়েছেন তুমুল প্রশংসা।
২০১২ সালে হাঁটুর চোটের কারণে কিছু সময়ের জন্য নাচ বন্ধ রেখে মনোযোগ দেন কোরিওগ্রাফিতে।
“কোরিওগ্রাফি করতে গেলে আরও গভীর দক্ষতা লাগে। আমি নাচকে ভালোবাসি, এটা আমার ভিত্তি। আমি সবসময়ই নৃত্যশিল্পীই থাকব।”
🌱 তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা
‘হৃদিশেখ স্টারবেজ ড্যান্স স্টুডিও’-র মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের নাচ শেখাচ্ছেন। তরুণদের অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি আশাবাদী,
“অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী এখন নাচে আসছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। এখন নাচেও ভবিষ্যৎ আছে—তরুণেরা সেটা বুঝতে পারছে।”
তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। হৃদিশেখ বলেন,
“সামাজিক চাপ, প্যাশন আর বাস্তবতার ভারসাম্য রাখতে হয়। বহু সমালোচনার মুখে পড়েছি, তবুও পিছু হটিনি।”
🌍 ডিজিটাল মাধ্যমে বিশ্বজোড়া প্রভাব
হৃদিশেখ এখন ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেও পরিচিত। ইউটিউব, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তার রয়েছে লক্ষাধিক অনুসারী।
তিনি বলেন,
“আমার ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিয়েছিল মা। স্টেজ পারফরম্যান্স আপলোড করা হতো। পরবর্তীতে বিশাল রেসপন্স পাই।”
আরও বলেন,
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন নতুন প্রজন্মের প্ল্যাটফর্ম। মেধা থাকলে স্বীকৃতি আসবেই—এটাই এর সৌন্দর্য।”
🤝 আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ
জার্মান, তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে কাজ করেছেন হৃদি। বিশেষ করে জার্মান নৃত্যশিল্পী নোয়েল রবিনসনের সঙ্গে কোলাবরেশন উল্লেখযোগ্য।
“নাচ এমন এক ভাষা, যেটা সারাবিশ্ব বোঝে। আমি এই ভাষার মাধ্যমেই বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরতে চাই।”
🎬 অভিনয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
‘বেঙ্গলি বিউটি’ সিনেমার প্রস্তাব পেলেও তিনি ‘ড্যান্স প্লাস সিজন থ্রি’-তে অংশ নিতে গিয়ে সেটি ছেড়ে দেন। তবে ভবিষ্যতে অভিনয়ের ইচ্ছা রয়েছে, এবং তিনি ভালো স্ক্রিপ্ট ও পরিচালকের অপেক্ষায় আছেন। ইতিমধ্যে ‘ইনসাফ’ সিনেমার একটি গানে কোরিওগ্রাফিও করেছেন।
🔚 নিজের ছন্দে, নিজের শর্তে
নাচ, কোরিওগ্রাফি, কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব—সব মিলিয়ে হৃদিশেখ হয়ে উঠেছেন একটি প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
নাচই তার জীবনের ভাষা, আর সেই ভাষায় হৃদিশেখ গড়ে তুলেছেন নিজস্ব এক জগৎ।
আপনি যদি হৃদিশেখের কাজ সম্পর্কে আরও জানতে চান, নিচে মন্তব্য করুন বা তার সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখুন।