ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহার ভিন্ন রীতি ও সামাজিক তাৎপর্য
অনলাইন ডেস্ক | ০৬ জুন, ২০২৫

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহা স্থানীয়ভাবে ‘ইদুল আদহা’, ‘ইদ-উল-জুহা’, ‘হারি রায় হাজি’ বা ‘বকর-ইদ’ নামে পরিচিত। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় আনুগত্য নয়, বরং সামাজিক সংহতি ও দানের শিক্ষায়ও গভীরভাবে প্রোথিত।
ঈদের আগের রাতে এক অনন্য রীতি পালিত হয়—‘তাকবিরান’। এ সময় মসজিদ, ঘরবাড়ি ও রাস্তায় গুঞ্জন তোলে সম্মিলিতভাবে উচ্চারিত ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি। পুরো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে ঈদের আগমনী সুর।
মুসলিমবিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত শুভেচ্ছা ‘ঈদ মোবারক’ হলেও ইন্দোনেশিয়ায় এটি খুব একটা প্রচলিত নয়। বরং বলা হয়—‘মিনাল আইদিন ওয়াল ফাইদিন, মোহন মাফ লাহির দান বাতিন’। এর প্রথমাংশ আরবি ও অর্থ: ‘আল্লাহ আমাদের পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং বিজয়প্রাপ্তদের কাতারে স্থান দিন’।
দ্বিতীয়াংশ ইন্দোনেশীয় ভাষায়, যার অর্থ ‘শরীরী ও মানসিকভাবে আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’। এটি ক্ষমা চাওয়া ও আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা ঈদুল আজহার আত্মিক তাৎপর্যকে আরও গভীর করে তোলে।
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাধারণত একে অপরকে বলেন—‘সেলামাত ইদুল আদহা’ বা ‘সেলামাত হারি রায়া হাজি’, যার অর্থ ‘শুভ ঈদ’।
ঈদের দিন সকালে খোলা মাঠ বা মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ ঈদের নামাজ। এরপর পালিত হয় কুরবানির বিধান। পরিবার ও পাড়া-মহল্লা একত্রে গরু, ছাগল বা মহিষ কিনে তা উৎসর্গ করে। তারপর মাংস আত্মীয়-পরিজন ও গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়, যা দান ও সহানুভূতির বাস্তব প্রতিফলন।
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহার আরেকটি বড় দিক হলো সামাজিক সেবা ও দানবিধান। অনেকেই দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সম্মিলিত খাবারের আয়োজন করেন। এসব কাজ ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি সমাজে সমতা ও সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেয়।
এভাবেই ইন্দোনেশিয়ার ঈদুল আজহা হয়ে ওঠে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং মানবিকতা, ত্যাগ ও সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রাণবন্ত উদাহরণ।
0 comments:
Post a Comment