বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক শুধু প্রযুক্তির দুনিয়ায় নয়, ব্যক্তিজীবনেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মাস্ক একটি ‘বৃহৎ পরিবার’ গড়তে চান—এমনকি অনেকটা ‘সন্তান বাহিনী’ তৈরির মতো একটি পরিকল্পনায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তিনি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মাস্ক তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর মাধ্যমে সম্ভাব্য মায়েদের খুঁজছেন এবং গর্ভাধানের প্রক্রিয়া সহজ করতে সরাসরি সারোগেট মাদার বা গর্ভভাড়া ব্যবস্থার প্রস্তাবও দিচ্ছেন। এতে করে তিনি ভবিষ্যতে বড়সড় এক পরিবার গড়ার লক্ষ্য পূরণ করতে চান।
এই উদ্যোগে জড়িত একাধিক নারী জানিয়েছেন, মাস্কের পক্ষ থেকে তাঁদের কড়া গোপনীয়তা চুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। ২৬ বছর বয়সী ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার জানান, তিনি মাস্কের ১৩তম সন্তানের মা হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, মাস্ক তাঁকে বহুবার বার্তা দিয়ে ভবিষ্যতে আবার গর্ভবতী করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এক বার্তায় মাস্ক তাঁকে বলেন, “আমি আবারও তোমাকে গর্ভবতী করতে চাই।” পাশাপাশি মহাবিপর্যয়ের আগে বহু সন্তান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্কের সন্তানের মায়েদের তালিকায় আছেন গায়িকা গ্রাইমস, নিউরালিংকের নির্বাহী শিভন জিলিস, সাবেক স্ত্রী জাস্টিন মাস্ক ও অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার। এ পর্যন্ত তিনি ১৪ সন্তানের জনক হলেও, বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি জাপানি কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি এক উচ্চপর্যায়ের জাপানি নারীকেও শুক্রাণু সরবরাহ করেছিলেন।
শিভন জিলিস, যিনি মাস্কের চার সন্তানের মা, তাঁকে ‘বিশেষ মর্যাদার’ অধিকারী হিসেবে দেখা হয় মাস্কের ঘনিষ্ঠ পরিসরে। তাঁকে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে, এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক আলোচনায় মাস্কের পাশে দেখা গেছে।
সেন্ট ক্লেয়ার জানান, প্রথমে মাস্কের সহযোগী জ্যারেড বারচালের মাধ্যমে তিনি ১.৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব পান, যার সঙ্গে ছিল প্রতি মাসে এক লাখ ডলার সহায়তা। শর্ত ছিল, সন্তানের পিতৃত্ব গোপন রাখতে হবে এবং জন্মসনদে মাস্কের নাম লেখা যাবে না। তিনি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করলেও সন্তান প্রসবের পর সরকারি নথিতে মাস্কের নাম দেননি। পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে মাসিক সহায়তা কমে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ডলার, এবং এরপর আরও কমিয়ে ২০ হাজার ডলার করা হয়।
এছাড়াও, ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সার টিফানি ফংসহ আরও কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, মাস্ক তাঁদের সন্তান নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ফং তাঁর বার্তাগুলো প্রকাশ করলে মাস্ক তাঁকে সামাজিক মাধ্যমে আনফলো করে দেন।
মাস্ক বহু সন্তান নেওয়ার পেছনে একটি ব্যক্তিগত দর্শনের কথা বারবার বলে আসছেন—তিনি বিশ্বাস করেন, বিশ্বজুড়ে কমে যাওয়া জন্মহার মানবজাতিকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে। তাঁর মতে, “জনসংখ্যা না বাড়লে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।” এই ভাবনা থেকেই তিনি মনে করেন, বুদ্ধিমান ও সক্ষম মানুষের আরও বেশি সন্তান নেওয়া উচিত—ভবিষ্যতের মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে।