ভারতে ঈদুল আজহায় পশু জবাই: ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ
অনলাইন ডেস্ক | ০৬ জুন, ২০২৫
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদুল আজহা, যা বকরি ঈদ নামেও পরিচিত, ভারতে আগামী শনিবার (৭ জুন) উদযাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উৎসবটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য প্রতিফলন, ত্যাগ, দান এবং উদযাপনের সময়কে চিহ্নিত করে। ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুসারে, ঈদুল আজহা হিজরি চন্দ্র ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পড়ে।

ঈদুল আজহার দিন মুসলমানরা বড় জমায়েতে ঈদের বিশেষ নামাজ আদায় করেন, যেখানে কোরবানির তাৎপর্য ও আল্লাহর প্রতি আত্মত্যাগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। নামাজের পর সচ্ছল মুসলমানরা ছাগল, ভেড়া, মহিষ বা গরু কোরবানি দিয়ে তা তিন ভাগে ভাগ করেন— এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব-দুস্থদের জন্য। এ উৎসব মূলত দয়া, সহানুভূতি ও সমাজে সমবণ্টনের প্রতীক।
তবে ভারতে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের কারণে কোরবানি ঈদ পালন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। হিন্দু ধর্মে গরুকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বেশিরভাগ রাজ্যে গো হত্যা আইনত নিষিদ্ধ। ফলে কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনেক হিসেব-নিকেশ করতে হয়। ধর্মীয় বৈচিত্র্যে ভরা এই দেশে মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখসহ নানা ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করেন। ফলে কোরবানি উৎসবে নানা বিধিনিষেধ ও আঞ্চলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
এদিকে, মহারাষ্ট্রে ঈদের আগে পশু বাজার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র গোসেবা আয়োগ গত ২৭ মে রাজ্যের সকল কৃষিপণ্য বিপণন কমিটি (এপিএমসি)–কে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ৩ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত কোনো পশু বাজার না বসানোর নির্দেশ দেয়। আয়োগ দাবি করে, এই পদক্ষেপ মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ আইনের আলোকে গরু ও তার বংশধরদের অবৈধ জবাই ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশনাকে ঘিরে মুসলিম সমাজসহ বিভিন্ন মহল চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঈদুল আজহার আগে পশু কেনাবেচা বন্ধ হওয়ায় কোরবানির প্রস্তুতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের এই পরিস্থিতি ধর্মীয় স্বাধীনতা, সামাজিক সহাবস্থান ও পশু অধিকার সংরক্ষণের মধ্যে একটি জটিল দ্বন্দ্ব তুলে ধরে, যা দেশটির বহুত্ববিধ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে থেকে যাচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment