বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন টেলিকম জায়ান্ট স্টারলিংক। স্যাটেলাইট-ভিত্তিক এই ইন্টারনেট সেবাটি চালুর জন্য দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন নির্মাণ এবং কারিগরি সহায়তায় স্টারলিংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় একাধিকবার সংযোগ স্থাপন ও গতি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।
তবে এখন মূল প্রশ্ন— তুলনামূলক বেশি মূল্যের এই সেবা বাংলাদেশের বাজারে আদৌ টিকবে কি না?
স্টারলিংকের অফিসিয়াল তথ্যমতে, সংযোগ নিতে হলে ব্যবহারকারীদের প্রথমেই কিনতে হবে একটি বিশেষ কিট, যার দাম ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার— বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এরপর প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি গুনতে হতে পারে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
এদিকে বর্তমানে দেশে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে ৫–২০ এমবিপিএস গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পাওয়া যায়, যা স্টারলিংকের চেয়ে প্রায় দশগুণ সস্তা। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি (বিএসসিএল) সম্প্রতি ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমিয়েছে— যা স্টারলিংকের জন্য প্রতিযোগিতা আরও কঠিন করে তুলবে।
তবে স্টারলিংকের গতি সত্যিই আকর্ষণীয়। তাদের পরিষেবা ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতিতে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের গড় ব্রডব্যান্ড গতি প্রায় ৫১ এমবিপিএস। ঢাকায় পরীক্ষামূলক সংযোগে ডাউনলোড স্পিড পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ২৩০ এমবিপিএস পর্যন্ত। বিশেষ করে যেসব এলাকায় স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট দুর্বল, সেখানে স্টারলিংক হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বুয়েটের অধ্যাপক ড. রিফাত শাহরিয়ার মনে করেন, “স্টারলিংক বাংলাদেশে সুফল বয়ে আনবে ঠিকই, তবে এটি মূল উৎস না হয়ে একটি বিকল্প অপশন হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।”
অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর বলেন, “দামের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকবে এটা। কিন্তু যারা প্রিমিয়াম ইন্টারনেট চান, তাদের জন্য এটি ভালো অপশন হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আফ্রিকার কিছু দেশে স্টারলিংক ১০ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশেও যদি শুরুতে এমন প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে পারে এবং বাজারে স্টারলিংক টিকে থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে।
সারসংক্ষেপে, স্টারলিংকের প্রযুক্তি আধুনিক ও সম্ভাবনাময় হলেও, দামই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ। “উচ্চগতির বিকল্প সংযোগ” না হয়ে যদি “প্রধান ইন্টারনেট মাধ্যম” হতে চায়, তবে মূল্যে আনতে হবে বাস্তবসম্মত পরিবর্তন।
0 comments:
Post a Comment