আলুর দাম একের পর এক কমতে থাকায় এখন বাজারে এর দাম সাধারণত ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
রংপুরে আলুর রেকর্ড উৎপাদন, কিন্তু চাষিদের মুখে হাসি নেই
রংপুরে এবছর আলুর উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়েছে, কিন্তু এজন্য চাষিদের মুখে হাসি নেই। বাজারে আলুর দাম এত কমে গেছে যে, বিক্রি করে নিজেদের খরচও উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, চাষিরা বিপদে পড়েছেন।
উৎপাদনের পরিমাণ
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩,৯৫০ হেক্টর। তবে, এ বছর আবাদের পরিমাণ বেড়ে ৬৬,২৮০ হেক্টরে পৌঁছেছে, যার ফলে আলুর উৎপাদন ২০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি হতে পারে।
রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট মিলে মোট ১,১৯,৮৩৯ হেক্টরে আলু আবাদ হয়েছে, যেখানে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ১,০০,৬০২ হেক্টর।
দামের দুরবস্থা
কৃষকরা জানান, গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি আলু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন এটি মাত্র ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে, চাষিরা মারাত্মক লোকসানে পড়েছেন এবং অনেকেই জমি থেকে আলু উত্তোলনই করছেন না।
চাষিদের দুর্ভোগের গল্প
বদরুল আলম, ময়নাকুঠির কৃষক, ২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, কিন্তু দাম না থাকায় আলু তুলতে পারছেন না।
নজরুল ইসলাম, গঙ্গাচড়ার কৃষক, ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ভালো ফলন পেলেও বিক্রির সময় অসুবিধায় পড়ছেন। হিমাগারে জায়গা নেই অথবা ভাড়া অনেক বেশি।
কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন, চব্বিশ হাজারি এলাকার চাষি বলেন, “ফসল ভালো হলেও দামে লোকসান হচ্ছে। হিমাগারে রাখলে খরচ বাড়ছে।”
আমিনুল ইসলাম, পীরগাছার চাষি, এক বিঘায় ৭০-৮০ মণ আলু উৎপাদন করেছেন, কিন্তু প্রতি মণ ৪৮০-৫২০ টাকায় বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
রেফাজ উদ্দিন, বদরগঞ্জের চাষি, নিজ জমিতে চাষ করলেও লাভের আশা নেই।
হিমাগারে আশার আলো নেই
কৃষকরা আলুকে হিমাগারে রাখতে চাইলে হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে জমিতেই ফসল ফেলে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ
রংপুর অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে, তবে এই অঞ্চলে উৎপাদন সবসময় চাহিদার তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। তাই চাষিদের সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি পরামর্শ দেন, “চাষিরা যদি স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষণে মনোযোগ দেন, তাহলে ভবিষ্যতে তারা ভালো দাম পেতে পারেন।”
0 comments:
Post a Comment