নির্বাসিত জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছালেন কবি দাউদ হায়দার। দেশে ফিরে আসার আশা ছিল, কিন্তু তা আর পূর্ণ হলো না। বিদেশের মাটিতে, জার্মানির রাজধানী বার্লিনে, তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় বার্লিনের এক প্রবীণ নিরাময়কেন্দ্রে তাঁর মৃত্যু ঘটে। কবির ছোট ভাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার অধ্যাপক আরিফ হায়দার সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দাউদ হায়দারের জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাবনায়। সত্তর দশকের শুরুতে তার কাব্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয় তাঁর দীর্ঘ কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’। এরপর ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তিরা এবং কিছু সংগঠন তাঁকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
ঢাকার এক কলেজ শিক্ষকের মামলায় ১১ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু কিছুদিন পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৭৪ সালের ২১ মে তাঁকে উড়োজাহাজে কলকাতায় পাঠানো হয়। পরে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সাহায্যে জার্মানিতে বসবাস শুরু করেন। তিনি বিদেশে পাসপোর্টের পরিবর্তে জাতিসংঘের বিশেষ ট্র্যাভেল পাস ব্যবহার করতেন। ১৯৮৯ সাল থেকে জার্মানিতে সাংবাদিকতা করলেও তাঁর কবিতা রচনার ধারা কখনো থামেনি। তিনি ‘ইউরোপের চিঠি’ নামে সমকালে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
কবির
মৃত্যুতে সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীরা শোক জানিয়েছেন। কবি ফরিদ কবি বলেন, ‘একটি কবিতার পঙ্ক্তির জন্য তাঁকে মাত্র ২২ বছর বয়সে
দেশ ছাড়তে হয়েছিল! প্রায় ৫১ বছর ধরে
প্রবাসে একা কাটিয়েছেন তিনি।’ তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’, ‘সম্পন্ন মানুষ নই’, ‘যে দেশে সবাই
অন্ধ’, ‘সংস অব ডেস্পায়ার’, ‘সমস্ত
স্তরে ক্ষতচিহ্ন’ উল্লেখযোগ্য।
কবির ছোট ভাই আরিফ হায়দার জানান, রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁর মরদেহ দেশে আনা সম্ভব নয়। বার্লিনে সমাহিত করার আইনি প্রক্রিয়া চলছে, যা শেষ হতে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।
0 comments:
Post a Comment