Wednesday, July 30, 2025

মোয়া পাখির পুনর্জন্ম: বিজ্ঞানের সাহসী প্রচেষ্টা না কল্পনা?

মোয়া পাখির পুনর্জন্মের প্রচেষ্টা: বিজ্ঞান, বিতর্ক ও ভবিষ্যতের দিগন্ত

মোয়া পাখির ছবি

বিশ্বের বৃহত্তম পাখি হিসেবে পরিচিত, তিন মিটার (প্রায় ১০ ফুট) উচ্চতার ডানাবিহীন বিশাল মোয়া পাখি একসময় ঘুরে বেড়াতো নিউজিল্যান্ডের বন-জঙ্গলে। শত শত বছর ধরে এই নিরীহ শাকাহারী প্রাণীটি বেঁচে ছিল প্রকৃতিতে, কিন্তু প্রায় ৬০০ বছর আগে, প্রথম পলিনেশীয় জনগোষ্ঠীর আগমনের পর অদৃশ্য হয়ে যায় এই প্রজাতি। আজ তার অস্তিত্ব কেবল সংরক্ষিত হাড়, শুকনো চামড়া, কিছু পালক এবং মাওরি জনগোষ্ঠীর মৌখিক ইতিহাসে সীমাবদ্ধ।

🧬 মোয়া পাখির পুনরুজ্জীবনের ঘোষণা

সম্প্রতি মার্কিন জেনেটিক প্রযুক্তি কোম্পানি Colossal Biosciences ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা এই বিলুপ্ত মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে ডোডো, উলি ম্যামথ এবং তাসমানিয়ান টাইগার-এর পর তাদের 'ডি-এক্সটিংশন' প্রকল্পে যুক্ত হলো মোয়াও।

📅 পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি

Colossal Biosciences-এর লক্ষ্য আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ডিএনএ সংগ্রহ ও জিন সম্পাদনার মাধ্যমে মোয়া প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা। fossil (জীবাশ্ম) থেকে ডিএনএ নিয়ে তা মোয়ার ঘনিষ্ঠ জীবিত আত্মীয় যেমন ইমু পাখির জিনে সম্পাদনা করে একটি নতুন জীব তৈরি করা হবে। এর পর সেই পাখিগুলোকে নির্ধারিত ‘rewilding site’-এ ছাড়া হবে।

🤝 অংশীদার ও সহযোগী

এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে নিউজিল্যান্ডের University of Canterbury-এর Ngāi Tahu Research Centre। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা স্যার পিটার জ্যাকসন, যিনি Colossal-এর একজন বিনিয়োগকারী ও মোয়া হাড় সংগ্রহকারী হিসেবেও পরিচিত।

"যদি সত্যিই কয়েক বছরের মধ্যে আবার মোয়া দেখতে পাই, তাহলে আমার জীবনে আর কোনো সিনেমা যতটা আনন্দ দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি সন্তুষ্টি পাব।"
— স্যার পিটার জ্যাকসন

⚠️ সমালোচনা ও সংশয়

তবে বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের একাংশ এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে বলছেন, এটি বাস্তবতাবিবর্জিত এবং বিজ্ঞাপনী প্রচারণা মাত্র। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ডি-এক্সটিংশন’ কথাটিই বিভ্রান্তিকর, কারণ প্রকৃত মোয়া আর ফিরে আসবে না—বরং সৃষ্টি হবে একটি জিনগতভাবে সম্পাদিত নতুন প্রজাতি।

ড. টরি হেরিজ (ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড) বলেন:

  • "এটা আসলে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।"
  • "জিন মানেই সব নয়—আচরণ, সামাজিকতা, শেখার ক্ষমতা জেনেটিক কোড দিয়ে সম্ভব নয়।"

🌿 সংরক্ষণ বনাম পুনরুজ্জীবন

অনেক গবেষক আশঙ্কা করছেন, বিলুপ্ত প্রজাতি ফিরিয়ে আনার এই প্রচেষ্টা বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণ থেকে গুরুত্ব সরিয়ে দিচ্ছে। Nature Ecology & Evolution জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্পগুলোতে অর্থ ব্যয় জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার সদস্য আরোহা টে পারেক মীড বলেন:

"এই প্রকল্পগুলো বাস্তব সংরক্ষণের চেয়ে ব্যক্তি ও করপোরেট গর্বের প্রকাশ। মোয়া ফিরলেও সে কোথায় থাকবে? কীভাবে বাঁচবে? সম্মানজনক জীবন পাবে কি?"

🔍 উপসংহার

Colossal Biosciences-এর এই সাহসী ঘোষণাগুলো প্রযুক্তির সীমা ছাড়িয়ে সম্ভাবনার দিগন্তে পৌঁছানোর চেষ্টা। বাস্তববাদী বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট কল্পনা, যা হয়তো নতুন জিনবিজ্ঞান চর্চার দরজা খুলবে, তবে প্রকৃত মোয়া পাখি আর কখনোই ফিরে আসবে না।

#মোয়া #ডি-এক্সটিংশন #Colossal #বিজ্ঞান #বিলুপ্তপ্রাণী

মোয়া পাখি, moa bird, বিলুপ্ত প্রাণী, extinct species, colossal biosciences, জিন প্রযুক্তি, de-extinction, ডি-এক্সটিংশন প্রকল্প, নিউজিল্যান্ডের পাখি, বিলুপ্ত মোয়া, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, শাকাহারী পাখি, ডোডো, mammoth, peter jackson, moa dna, ইমু পাখি, rewilding, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ সংরক্ষণ

10 comments:

Popular News

Categories