যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব ও বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ: একটি বিশ্লেষণ
যদি দক্ষিণ এশিয়ায় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে তার সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশ। এই সম্ভাব্য সংকটের কারণ কেবল সরাসরি সামরিক হামলার ঝুঁকি নয়, বরং এর বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক, মানবিক ও কূটনৈতিক পরিণতির কারণেই বাংলাদেশ গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রথমত, যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম রাজ্য থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দেশের জনসংখ্যার ওপর চাপ বাড়বে এবং খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবায় সংকট দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকায় এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে বাংলাদেশের সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। যার ফলে মূল্যস্ফীতি, পণ্যসংকট এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হতে পারে।
তৃতীয়ত, যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাপে পড়ে যেতে পারে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া—এই দুটি ভূ-রাজনৈতিক ব্লকের মধ্যে অবস্থান নেয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর নানাবিধ কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের অবস্থানে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কৌশলগতভাবে জটিল এবং অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণেও তা প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়, যুদ্ধ কোনো রূপকথা নয় বরং এটি বহুমাত্রিক ধ্বংস ও অনিশ্চয়তার উৎস। যুদ্ধ প্রতিরোধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আঞ্চলিক শান্তিরক্ষা প্রচারই হওয়া উচিত বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। কোনো রাষ্ট্রের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নয়, বরং জাতীয় স্বার্থকেই সর্বোচ্চ বিবেচনায় নেয়া উচিত।
0 comments:
Post a Comment