ভারতের নতুন মহাসড়ক প্রকল্প: ড. ইউনূসের মন্তব্যে সাড়া দিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকার উদ্যোগ
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৫
চীনে সফরকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য ভারতের কৌশলগত মহলে বড়সড় সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত মার্চে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো—যাদের 'সেভেন সিস্টার্স' বলা হয়—স্থলবেষ্টিত হওয়ায় তাদের জন্য সমুদ্রপথে একমাত্র ভরসা বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূসের এই কৌশলগত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারত তাৎক্ষণিকভাবে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে। এরই ফলশ্রুতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত নতুন একটি চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দেয়। প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয় গত ৩০ এপ্রিল এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২,৮৬৪ কোটি রুপি। এই ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন (NHIDCL)-এর এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানান, “ড. ইউনূসের মন্তব্য আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা বুঝেছি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চলাচলের জন্য বাংলাদেশ একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা বিকল্প খুঁজছি।”
কেন এই মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ?
নতুন এক্সপ্রেসওয়েটি শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি একটি কৌশলগত করিডর। এটি শিলচরের মাধ্যমে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বারাক উপত্যকার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে। এভাবেই ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চলের জন্য এটি হবে একটি নতুন প্রবেশদ্বার।
বাংলাদেশের পরিবর্তে মিয়ানমার?
যদিও এই মহাসড়ক বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমাবে, তবে ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে মিয়ানমারের ওপর নির্ভরতাও। এই জন্যই ভারত সরকার কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট প্রজেক্ট-এ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে নদী বন্দর হয়ে ভারতের মিজোরাম পর্যন্ত একটি বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরি করা হচ্ছে।
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র রুট হল শিলিগুড়ি করিডর, যা 'চিকেন নেক' নামে পরিচিত—অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণে ভারত বহুমুখী রুট খুঁজছে। তবে বাংলাদেশ সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে ভারতের চলাচলে কিছু সীমাবদ্ধতা আনায় ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েছে।
নির্মাণে চ্যালেঞ্জ
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। শিলং-শিলচর মহাসড়কটি পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে, যেখানে ভূমিধস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে।
উপসংহার
ড. ইউনূসের কৌশলগত মন্তব্য ভারতের ভূরাজনৈতিক ভাবনায় বড়সড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য সংযোগ নিশ্চিত করতে ভারত এখন বড় বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। সময়ই বলবে, এই নতুন মহাসড়ক কতটা কার্যকর হয় এবং এর মাধ্যমে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত থাকে।
0 comments:
Post a Comment