জমির লোভে কিশোরী মেয়েকে খুন: মানবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ
কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ — মাত্র ১৫ বছর বয়স। নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতী। স্কুল, পরিবার আর বন্ধুদের মাঝে সে ছিল শান্ত, মেধাবী আর ভদ্র স্বভাবের মেয়ে। কিন্তু সেই জান্নাতীকেই এক রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নৃশংসভাবে হত্যা করলো তার সবচেয়ে আপন মানুষ — বাবা, মা এবং চাচি।

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে, যা এখন পুরো এলাকায় চরম শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
রাতের অন্ধকারে মৃত্যুপরিকল্পনা
শনিবার গভীর রাতে জান্নাতী তার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ মা-বাবা তাকে ডাকেন—"জান্নাতী, চল বাইরে যাই।" মেয়েটি অবাক হয়, এত রাতে কোথায় যাবে? বারবার জানতে চায়, কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু বলে, “চলো দরকার আছে।”
বিশ্বাস ভাঙার মতো কিছু তো ঘটেনি—তাই ঘুমচোখে মেয়েটি বেরিয়ে পড়ে তাদের সঙ্গে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে, চাচি শাহিনা বেগমও যোগ দিয়েছেন।

ভুট্টাক্ষেতে মৃত্যু ফাঁদ
গন্তব্য ছিল এক ভুট্টাক্ষেত। সেখানে পৌঁছেই মুখ চেপে ধরা হয় জান্নাতীর। এরপর মাথায় ও শরীরে রড দিয়ে একের পর এক আঘাত। পালাতে চাইলেও সে পারেনি। এরপর ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়ে হত্যা!
পরদিন মরদেহ দেখে প্রতিবেশীরা খবর দেন। বাবা-মা অভিনয় করে কান্নাকাটি করে। পরে আশপাশের ২৭ জন প্রতিবেশীর নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে — হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। জমি দখলের উদ্দেশ্যে নিজের মেয়েকেই হত্যা করা হয়েছিল।
স্বীকারোক্তি ও উদ্দেশ্য
৩২ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। কুড়িগ্রাম থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ হত্যাকারীদের স্বীকারোক্তি নিশ্চিত করেন।
গ্রামজুড়ে শোক
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পুরো গ্রামে শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মেয়ে হিসেবে জান্নাতী ছিল নিঃসন্দেহে প্রিয়।
“মেয়েটা খুবই ভালো ছিল। কখনো কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।” — প্রতিবেশী
একটি সমাজের আয়না
যেখানে কেউ সন্তানের জন্য দিনরাত চেষ্টা করে, সেখানে কেউ আবার জমির লোভে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলে। এই ঘটনাই যেন সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়।
আজ জান্নাতী নেই। কিন্তু এমন যেন আর না হয় — সেটাই হোক আমাদের ন্যূনতম মানবিক অঙ্গীকার।
0 comments:
Post a Comment