ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারের পাশে ‘টাইটান এগ্রো’ নার্সারিতে মাটি ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে উন্নত মানের সবজির চারা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পলিনেট হাউজে প্লাস্টিকের ট্রেতে সারিবদ্ধভাবে তৈরি করা হচ্ছে টমেটো, মরিচ, বেগুন, ব্রকলি, লেটুসপাতা, পেঁপে, ফুলকপি, গাজরসহ ১৫-২০ প্রজাতির সবজির চারা।
এই
পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে কোকোপিট — নারিকেলের ছোবড়া, জৈব সার ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশের
সমন্বয়ে তৈরি এক বিশেষ মাধ্যম।
মাটির কোনো ব্যবহার নেই, ফলে কীটপতঙ্গের আক্রমণ বা রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও
থাকে না। এতে চারাগুলো সুস্থ, সবল ও সমানতালে বৃদ্ধি
পায়।
করোনাকালে
শুরু, আজ বিশাল সাফল্য
২০২১
সালে করোনাকালে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কৃষির প্রতি
আগ্রহী হন উদ্যোক্তা সাইদুর
রহমান। ভালো মানের চারা সংগ্রহে সমস্যা হওয়ায় নিজেই চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। অনলাইনের মাধ্যমে নারিকেলের ছোবড়া, প্লাস্টিকের ট্রে-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী
সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে শুরু করেন কাজ। প্রথমদিকে ৫ হাজার চারার
সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে টাইটান এগ্রোতে প্রায় ৩ লাখ চারা
উৎপাদন করা হচ্ছে।
প্রথমদিকে
খুব বেশি সাড়া না পেলেও এখন
প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪
লাখ টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে। শুধু নিজের না, আশপাশের ইউনিয়নগুলোর কৃষকদের চাহিদাও পূরণ করছে এই নার্সারি। বর্তমানে
এখানে ৫ জন শ্রমিক
কাজ করছেন, যাদের প্রত্যেকের মাসিক আয় ১৮-২০
হাজার টাকা।
কৃষকদের
আস্থা অর্জন
চারা
ক্রয় করতে আসা কৃষক আকরাম হোসেন জানান, টাইটান এগ্রোতে ভালো মানের সবজির চারা পাওয়ায় তিনি এখান থেকেই চারা সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে, কৃষক সজিব হাসান বলেন, কৃষকরা অনেক সময় ভালো বীজ বা চারা পান
না, কিন্তু এখানে কোকোপিট পদ্ধতিতে উৎপাদিত উন্নতমানের চারা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে, তাও তুলনামূলক কম দামে।
টাইটান
এগ্রোর ম্যানেজার জানান, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সুস্থ ও উন্নতমানের চারা
উৎপাদন। মাটি ছাড়াই পলি হাউসে বিশেষ তাপমাত্রা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের
মাধ্যমে চারাগুলো সমানভাবে বড় হয়, ফলে কৃষকেরাও একইসঙ্গে সমান মানের চারা পেয়ে থাকেন।
উদ্যোক্তার
অভিমত
সাইদুর
রহমান বলেন, “আমি কৃষিকাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, ভালো চারা একটি ফসলের সাফল্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজ উদ্যোগে উন্নতমানের চারা উৎপাদন শুরু করি।” তিনি আরও জানান, “একজন কৃষককে চারা তৈরি করতে ৩৫-৪০ দিন
লেগে যায় এবং নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা সেই প্রাথমিক কাজটা করে দিচ্ছি, ফলে কৃষকেরা সময় ও খরচ উভয়
ক্ষেত্রেই লাভবান হচ্ছেন।”
তিনি
ব্যাখ্যা করেন, কোকোপিট তৈরি করতে প্রথমে নারিকেলের ছোবড়া পানিতে ভিজিয়ে শুকানো হয়, এরপর জীবাণুমুক্ত করে জৈব সার মিশিয়ে প্লাস্টিকের ট্রেতে চারার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে
বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং ২৫-৩০ দিনের
মধ্যে চারা মাটিতে রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বাজারের তুলনায় একটু দাম বেশি হলেও চারার টিকে থাকার হার অনেক বেশি, ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি
বিভাগের প্রশংসা
ঝিনাইদহ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী
চন্দ্র রায় জানান, “টাইটান এগ্রোতে উৎপাদিত চারাগুলো অত্যন্ত উন্নত মানের। কোকোপিট পদ্ধতিতে উৎপাদন হওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম এবং ফলনও
বেশি হচ্ছে। আমরা কৃষকদের মধ্যে এ ধরনের আধুনিক
চারা ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াচ্ছি।”
তিনি
আশা প্রকাশ করেন, এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে
পড়লে দেশের কৃষি উৎপাদনে আরও বড় পরিবর্তন আসবে।
0 comments:
Post a Comment