২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪ শতাংশ অকৃতকার্য হয়েছেন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই এসএসসি এবং এইচএসসিতে দুই জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে কলা, আইন এবং সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটেও, যেখানে ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। মোট প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী যারা দুটি জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন, তারা এবার ভর্তি পরীক্ষায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান যাচাই করা হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাফল্য প্রদর্শনের চাপের কারণেও শিক্ষকদের মাঝে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক শিক্ষক যদি দক্ষতা হারান, তখন গড় নম্বর বৃদ্ধি করে ফেলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যমতে, তিনটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ২ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে দুই জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। বিজ্ঞান ইউনিটে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৭২২ জন, মানবিক ক্ষেত্রে ১৯ হাজার ৮৩৯, এবং বাণিজ্যে ৮ হাজার ৫৩৩ জন।
পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৮ হাজার ৭৪৭ জন পাস করতে সক্ষম হয়েছেন, অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরনুর রশিদ জানান, “শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের প্রকৃত যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটছে না। অনেক সময় শিক্ষকদের সঠিক নম্বর দেওয়ার জন্য চাপও সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ যেসব নম্বর প্রাপ্ত তারা সেগুলোর যোগ্যতা হারাচ্ছে।”
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে না। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। ফল প্রকাশের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মান অবশ্যই প্রধান।”
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার মান সম্পর্কে এ চিত্র চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা সতর্ক করেছেন যে, আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। একাডেমিক পরীক্ষাগুলো যাতে শেখার বিষয়কে মাপার পরিবর্তে ফলাফলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সে কারণে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।
0 comments:
Post a Comment